পারমাণবিক বর্জ্যের সংরক্ষণ সমস্যার সমাধান আজও মানুষের অজ্ঞাত

Submitted by Hindi on Sun, 09/03/2017 - 11:24
Source
“JIBANER PARIBESH ” Environment of Life, Monthly Magazine, 16th July 2012, Green Circle of India, 52 / D / 7 Babubagan Lane, Kolkata – 7000 031

1980 -পারমাণবিক শক্তির খরচ ক্রমাগত বেড়ে যাচ্ছে। পরমাণু কেন্দ্র আয়ুশেষে বন্ধ করার সমস্যা হল একটি বিরাট বড় সমস্যা। একটা দুর্ঘটনা ঘটলে তাকে সামাল দেবার খরচ বিরাট পরিমাণ। আমেরিকার থ্রি মাইল আইল্যান্ডে যে দুর্ঘটনা ঘটে তাকে পরিষ্কার করার খরচ দাঁড়ায় এক শত (100) কোটি মার্কিন ডলার। চেরনবিলে সাফাই খরচ হয়েছে পাঁচ শ (500) কোটি ডলার। ফুকুসিমার দুর্ঘটনা জাপানি অর্থনীতিতে বিপর্যয় এনে দিয়েছে। খরচ কত দাঁড়াবে তা এখনও জানা সম্ভব নয়। অকেজো পারমাণবিক কেন্দ্রকে সরিয়ে ফেলার সমস্যাও একটি বিরাট সমস্যা।

এ কথা ঠিক যে পারমাণবিক বর্জ্যের সংরক্ষণ সমস্যার সমাধান আজও মানুষের অজ্ঞাত। আর তাই পারমাণবিক শক্তি উত্পাদনের এক বিরাট সমস্যা হচ্ছে পারমাণবিক কেন্দ্রে যে বর্জ্য সৃষ্টি হয় তাকে সরানোর (disposal) বন্দোবস্ত করা। প্রতিটি কেন্দ্রে সৃষ্টি হয় প্লুটোনিয়াম 239 (PU239) যার জীবন (half life) 24000 বছর। এর বিষক্রিয়া এক লক্ষ বছর ধরে চলবে। এছাড়া একটি কেন্দ্র তৈরি করে তেজস্ক্রিয় জল। এই সব মারাত্মক পদার্থ পৃথিবীতে ছড়িয়ে রেখে ভবিষ্যত প্রজন্মের জীবনকে বিপদের মুখে ঠেলে দেওয়ার কি অধিকার আছে বর্তমান সভ্যতার?

আজ পর্যন্ত এইসব পদার্থের নিরাপদে সরিয়ে রাখার কোনও ব্যবস্থাই বিজ্ঞানীরা করতে পারেন নি। পারমাণবিক শিল্পের হিসেব অনুযায়ী 2000 সালের মধ্যে পনেরো (15) থেকে কুড়ি (20) লক্ষ স্টালন উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তেজস্ক্রিয় পদার্থ জমা হয়েছে। এর মধ্যে সামরিক শিল্প থেকে তেজস্ক্রিয় বর্জ্যের হিসেব নেওয়া হয়নি, যার পরিমাণ অসামরিক শিল্পের চেয়ে বেশি। প্রতিটি পরমাণু কেন্দ্র যে বিরাট পরিমাণ PU239 জমা করেছে বিজ্ঞানীরা আজ পর্যন্ত তার ব্যবহার করতে পারেন নি।

প্লুটোনিয়াম 239 হচ্ছে সব থেকে মারাত্মক ক্ষতিকর, যার এক গ্রামের এক লক্ষ ভাগের এক ভাগ (যা অদৃশ্য) তাও ক্যান্সার সৃষ্টি করতে সক্ষম। ভারতে মোনাজাইট মিশ্রিত বালির থেকে থোরিয়াম উদ্ধার করে বিজ্ঞানী ভাবার পদ্ধতিতে প্লুটোনিয়াম তৈরী করে প্লুটোনিয়াম বোমা বানানো হয়েছিল। একটি মাঝারি মাপের পরমাণু চুল্লি প্রতি বছরে আড়াই শো (250) থেকে তিন শত (300) কেজি PU239 সৃষ্টি করে 239 এই PU239 প্রকৃতিতে পাওয়া যায় না। এক বার সৃষ্টি হলে তাকে সর্বকালের জন্য আলাদা করে রাখতে হবে। কারণ তা লক্ষ লক্ষ বছর ধরে পারমাণবিক দূষণ সৃষ্টি করবে। মৃত জীবেও তেজস্ক্রিয়তা রয়ে যায় এবং তা পরিবেশে ক্রিয়াশীল থাকে। 1975 সালে আমেরিকাতে হিসেব করা হয়েছিল যে PU239 কে সরিয়ে রাখার ব্যবস্থা 99.99 শতাংশ হলেও PU239 পরিবেশে ছড়িয়ে পড়বে এবং তাতে 2030 সালের পর পঞ্চাশ (50) বছর ধরে প্রতি বছরে পঞ্চাশ হাজার (50,000) প্রাণঘাতী ফুসফুসের ক্যান্সার রোগ সৃষ্টি হবে।

আমেরিকার Environment Protection Agency - এর নিয়ম অনুসারে তেজস্ক্রিয় বর্জ্য পদার্থকে 10000 বছর নিস্ক্রিয় করে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। বেশ কয়েক বছর আগে আমেরিকায় বারো হাজার (12,000) টনের মতো উচ্চ মাত্রার তেজস্ক্রিয় পদার্থ জমে গিয়েছে এবং তার পরিমাণ প্রতি বছর দু হাজার (2000) টন করে বাড়ছে। এইসব খরচ শিল্প মালিক বা সরকারকে বইতে হয়; তাই পারমাণবিক শক্তির খরচ ক্রমাগত বেড়ে যাচ্ছে। পরমাণু কেন্দ্র আয়ুশেষে বন্ধ করার সমস্যা হল একটি বিরাট বড় সমস্যা। একটা দুর্ঘটনা ঘটলে তাকে সামাল দেবার খরচ বিরাট পরিমাণ। আমেরিকার থ্রি মাইল আইল্যান্ডে যে দুর্ঘটনা ঘটে তাকে পরিষ্কার করার খরচ দাঁড়ায় এক শত (100) কোটি মার্কিন ডলার। চেরনবিলে সাফাই খরচ হয়েছে পাঁচ শ (500) কোটি ডলার। ফুকুসিমার দুর্ঘটনা জাপানি অর্থনীতিতে বিপর্যয় এনে দিয়েছে। খরচ কত দাঁড়াবে তা এখনও জানা সম্ভব নয়। অকেজো পারমাণবিক কেন্দ্রকে সরিয়ে ফেলার সমস্যাও একটি বিরাট সমস্যা। একটি পারমাণবিক চুল্লির জীবনকাল পঁচিশ (25) থেকে চল্লিশ (40) বছর। চুল্লির প্রতিটি জিনিস তেজস্ক্রিয় হয়ে যায়। আমেরিকার সিপিং ফোর্ট পরমাণু কেন্দ্র 1984 সালে অকেজো হয়ে যায়। ওই কেন্দ্র তৈরি করতে খরচ হয়েছিল ছয় (6) কোটি ডলার। তাকে নিস্ক্রিয় করতে খরচ হয় আট (8) কোটি ডলার। এর তথ্য অনুযায়ী সারা বিশ্বে চার শত চৌত্রশ (434) টি পারমানবিক চুক্তিবদ্ধ হয়ে গেছে এবং ভারতে কুড়ি (20) টি চুল্লির মধ্যে দশ (10) -টি বৃদ্ধ, অর্থাত 20 বছরে বেশী বয়স্ক হয়ে গেছে।

পরমাণু বিদ্যুতের খরচ ও তার উত্পাদনের বিপদ দেখে পৃথিবীতে সমস্ত উন্নত দেশ পরমাণু বিদ্যুত কেন্দ্র বন্ধ করে দিচ্ছে। ভারত ও চিন বাদ দিলে পরমাণু কেন্দ্র স্থাপনের উত্সাহ বিভিন্ন দেশে কমে গিয়েছে। এর কারণ তিনটি, প্রথম - পরমাণু বিদ্যুতের খরচ ক্রমাগত বেড়ে গিয়েছে।

দ্বিতীয় - থ্রিমাইল আইল্যান্ড, চেরনোবিল এবং ফুকুসিমার দুর্ঘটনা। তৃতীয়ত - তেজস্ক্রিয় বিকিরণ সম্বন্ধে নতুন জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা।

1978 সালের পর আমেরিকা আর কোনও নতুন পরমাণু বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপন করার অর্ডার দেয়নি। ফুকুসিমা দুর্ঘটনার পর বিভিন্ন দেশে পারমাণবিক শক্তি সম্বন্ধে উত্সাহ কমে গেছে। অস্ট্রেলিয়া জানিয়েছে তারা আর পরমাণু বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপন করবে না।

জার্মানি জানিয়েছে যে 2022 সালের মধ্যে তারা সমস্ত পরমাণু বিদ্যুত কেন্দ্র বন্ধ করে দেবে।

ইতালি যদিও তার 86 শতাংশ বিদ্যুত বাইরে থেকে আমদনি করে তবুও যে দেশের মানুষ ফুকুসিমার পর গণ ভোটে জানিয়েছে যে তারা পরমাণু বিদ্যুত কেন্দ্র চায় না।

সুইজারল্যান্ড সরকার জানিয়েছে তারা আর পরমাণু বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপন করবে না। যেগুলি আছে সেগুলিও ধীরে ধীরে বন্ধ করে দেবে।

তাইওয়ানের বিরোধী বিধায়করা তাদের পার্লামেণ্টে বিল আনছে দেশকে তারা পরমাণু মুক্ত চায়। চীন সরকার ফুকুসিমা দুর্ঘটনার পর তাদের পরমাণু কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা স্থগিত রেখেছে।

জাপান সরকার স্থির করেছে যে তাদের সমস্ত পরমাণু কেন্দ্রই বন্ধ করে দেবে।

( জীবনের পরিবেশ, ১৬ই জুলাই ২০১২, গ্রীন সার্কল অফ ইন্ডিয়া, ৫২ / ডি / ৭ বাবু বাগান লেন কলিকাতা – ৩১)