Source
Extract from the book titled “Banglay Arsenic: Prokiti O Pratikar” written by Prof. Manindra Narayan Majumder
চিকিত্সা বিজ্ঞানে, কোনও দেশেই এ পর্যন্ত এই বিষয়ে পঠন-পাঠনের কোনও ব্যবস্থা ছিল না। তার ফলে শুধু রোগী পরীক্ষা করে তার পিছনের কারণ সম্পর্কে অনুমান ও রোগ নির্ণয় সম্ভব হয় না। আর যেহেতু আর্সেনিক বিষণের রোগলক্ষণ আর পাঁচটা পরিচিত রোগলক্ষণ থেকে অভিন্ন, তাই বহুদিন পর্যন্ত আর্সেনিক আক্রান্ত রোগীর নানারকম ভুল চিকিত্সাই হয়ে এসেছে।
গত দু-এক দশকে ক্রমবর্ধমান পরিবেশীয় আর্সেনিকের বিপদ সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী সচেতনতা যেমন বেড়েছে, তেমনি আর্সেনিকের উপরে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাহিত্যে সঞ্চিত হয়েছে বিপুল পরিমাণ মূল্যবান তথ্য ও তত্ত্বাবলী। মনুষ্য দেহে তো বটেই, কোন জীব জন্তুর জন্যেই আর্সেনিকের অত্যাবশ্যকিয়তা আজও প্রমাণিত হয় নাই।মানুষের শারীরবৃত্তে আর্সেনিকের কোনওরকম অত্যাবশ্যকীয়তা আজও প্রতিষ্ঠিত হয় নি। ইঁদুর, হ্যামস্টার, মুরগি, ছাগল, গিনিপিগ ইত্যাদির জন্যে অত্যাবশ্যক বলে কোনও কোনও গবেষক দাবি করছেন। পদার্থ ও জীবদেহ সম্পর্কে “অভাব-পর্যাপ্ত–বিষণ” নিয়মটি প্রযোজ্য। জীবদেহে অতি সামান্য মাত্রায় আর্সেনিক যদি অত্যাবশ্যকও হয়, তবে তা পরিবেশ থেকে অনায়াসেই এসে যেতে পারে। কোন বস্তু বেশি মাত্রায় বিষ ( যেমন - লবণ, সোডিয়াম ক্লোরাইড ) স্বল্প মাত্রায় উপকারী হবে কি না, তা নির্ভর করে বস্তুটির রাসায়নিক প্রকৃতি ও জীবদেহে তার প্রাণরাসায়নিক ক্রিয়া বিধির ওপর। তাই জীবদেহে বস্তুটির ভূমিকা ও পরিণতিই নির্ধারণ করবে অল্প মাত্রায় সেটি বিষ হবে কিনা। আর্সেনিক, পারদ, লেড ক্যাডমিয়াম ( “দুই চতুষ্টয়” ) অল্পমাত্রায়ও যে বিষ, তা জীবদেহে তাদের ক্রিয়াকর্মের আবিষ্কারে আজ জানা হয়ে গেছে। তাই জলে বাতাসে খাদ্য বস্তুতে আর্সেনিকের মাত্রা নীতিগত ভাবে শূন্য হওয়া উচিত। কিন্তু আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা হেতু এবং স্বাভাবিক আবহমাত্রার অহ্রাসযোগ্য কারণে শূন্যের বদলে জলে আর্সেনিকের মাত্রা আগে বিভিন্ন দেশে 50 µg/L কাছাকাছি রাখা হত। এখন তা কমিয়ে 20, 10, 5 বা 2 -এ নামানোর ভাবনা চিন্তা চলছে। কোথাও কোথাও নামিয়ে আনাও হয়েছে।
রোগ গবেষণার বিশেষত্ব
মানবদেহে আর্সেনিকের প্রতিক্রিয়ার জ্ঞান সম্বন্ধে দুটি বিশেষত্ব স্মরণয়োগ্য : প্রথমত, এই সম্পর্কিত তথ্যাদির বেশির ভাগটাই এসেছে মানুষের উপর আর্সেনিকের প্রতিক্রিয়ার ফলাফল থেকে, জীবজন্তুর উপর ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা থেকে নয়। দ্বিতীয়ত, আর্সেনিক বিষণের, বিশেষ করে ক্রনিক বিষণ সম্বন্ধে চিকিত্সকদের অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানের অভাব। চিকিত্সা বিজ্ঞানে, কোনও দেশেই এ পর্যন্ত এই বিষয়ে পঠন-পাঠনের কোনও ব্যবস্থা ছিল না। তার ফলে শুধু রোগী পরীক্ষা করে তার পিছনের কারণ সম্পর্কে অনুমান ও রোগ নির্ণয় সম্ভব হয় না। আর যেহেতু আর্সেনিক বিষণের রোগলক্ষণ আর পাঁচটা পরিচিত রোগলক্ষণ থেকে অভিন্ন, তাই বহুদিন পর্যন্ত আর্সেনিক আক্রান্ত রোগীর নানারকম ভুল চিকিত্সাই হয়ে এসেছে।
আর্সেনিক প্রজাতি সমূহের বিষ ক্রিয়াক্রম
পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে বিষক্রিয়া আর্সেনিকের রাসায়নিক প্রজাতির উপর দারুণভাবে নির্ভরশীল। আর্সাইনের (AsH3) মতো যৌগ মারাত্মক বিষ, মর্মান্তিক বিষক্রিয়া প্রায় তাত্ক্ষণিক, সেখানে আর্সেনোবিটেন ( AB ) আর্সেনোকলিন ( AC ) বা আর্সেনোসুগার সমূহ প্রায় নির্দোষ এবং নির্বিষ। জীবদেহে আর্সেনিক রাসায়নিক প্রজাতিসমূহের বিষক্রিয়ার ক্রম অনেকটা নিম্নরূপ।
আর্সাইন > জৈব আর্সেনাইট (III) > আর্সেনিয়াস অকসাইড > আর্সেনেট (V)
(জারণস্তর - 3) (MMAIII, DMAIII) (অজৈব, জারণস্তর + 3)
ক্রনিক ও অ্যাকিউট বা তীব্র বিষণ
দেহে প্রবিষ্ট আর্সেনিকের ডোজ বা মাত্রা অনুযায়ী আর্সেনিক বিষ ক্রিয়ার রোগলক্ষণ পরিষ্ফূট হয়। আবার এই বিষ ক্রিয়া ভীষণ ভাবে নির্ভর করে আর্সেনিকের রাসায়নিক প্রজাতির উপর।
তীব্র মাত্রায় বা অ্যাকিউট ডোজে কষ্ট ও রোগলক্ষণ প্রায় তাত্ক্ষণিক। খাদ্য পেটে রোগ-লক্ষণ বেরোতে সময় লাগে। আর অল্প ডোজে দীর্ঘকাল শরীরে আর্সেনিক প্রবেশ করলে রোগলক্ষণ বেরোতে অনেক সময় লাগে। শুধু কয়েকদিন বা মাস নয়, হয়তো কয়েক বছর। এইই হল অ্যাকিউট ও ক্রনিক ডোজের মৌলিক পার্থক্য।
আর্সেনিকের বিষক্রিয়া অন্যান্য নানা পরিস্থিতির (ফ্যাকটরের) ওপর নির্ভর করে। একদিকে আক্রান্ত ব্যক্তির শারীরিক প্রতিরোধ ক্ষমতা, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, অন্যদিকে আর্সেনিক ঘটিত পদার্থের ভৌতিক অবস্থা (গ্যাস, দ্রবণ, গুঁড়ো), পদার্থ কণার সাইজ, দেহে শোষণের হার, শোষণকাল, অপদ্রব্যের উপস্থিতি, মাত্রা ইত্যাদি।
সাধারণভাবে বলা যায় 200 থেকে 300 মিগ্রা আর্সেনিক দ্রুত মৃত্যুর কারণ। আবার কেউ কখনও 20 মিগ্রা আর্সেনিকে মারা যায়, আবার 10 গ্রাম খেয়েও কেউ কেউ বেঁচে যায়।
ক্রনিক বিষণ বা অল্পমাত্রায় দীর্ঘকালের বিষক্রিয়া আর একবারে বেশি ডোজের অ্যাকিউট বিষক্রিয়ার মধ্যে সুস্পষ্ট সীমারেখা নেই। তবু আলোচনার সুবিধার জন্য এই ভাবেই আমরা একরকম ভাগ করব।
আর্সেনিকের দেহে প্রবেশের প্রধান পথ হল শ্বাস-প্রশ্বাস ও খাদ্যনালি, যদিও চামড়ার মাধ্যমে আর্সেনিয়াস অকসাইড কিঞ্চিত পরিমানে শরীরে প্রবেশ করতে পারে।
सम्पर्क
মণীন্দ্র নারায়ণ মজুমদার
প্রাক্তন অধ্যাপক, রসায়ন বিভাগ, ডীন ফ্যাকল্টি অফ সায়েন্স, কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়