Source
बांग्ला आर्सेनिक : प्रोक्ति ओ प्रतिकार
কার্বাংকল ও লিভারের অসুখে কার্ল মার্কস কিছুদিন আর্সেনিক খেয়েছিলেন। আবার কার্বাংকল হলে মার্কস আর্সেনিক খেতে অস্বীকার করেন। তিনি বলেন “আর্সেনিক মাথা বড় বেশি নষ্ট করে দেয়। আমার বুদ্ধি ও মাথা তো ঠিক রাখতেই হবে”।
1786 সাল থেকে ইওরোপে প্রায় দেড়শ বছর যে আর্সেনিকযুক্ত টনিক ব্যাপক ভাবে প্রচলিত ছিল, তার নাম ফাউলারস্ সলিউসন। এতে 1% মতো পটাসিয়াম আর্সেনাইট থাকত। অসংখ্য মানুষ এই পেটেণ্ট ওষুধটি খেত। তার মধ্যে চার্লস ডারউইন একজন। তিনি প্রায় সবসময়েই অসুস্থ থাকতেন। তাঁর অসুখের লক্ষণ সমূহ ক্রনিক আর্সেনিক বিষণের লক্ষণাদির সঙ্গে মিলে যায়। অতীত গোয়েন্দা তদন্তে এসব প্রতিষ্ঠিত।কার্বাংকল ও লিভারের অসুখে কার্ল মার্কস কিছুদিন আর্সেনিক খেয়েছিলেন। আবার কার্বাংকল হলে মার্কস আর্সেনিক খেতে অস্বীকার করেন। তিনি বলেন “আর্সেনিক মাথা বড় বেশি নষ্ট করে দেয়। আমার বুদ্ধি ও মাথা তো ঠিক রাখতেই হবে”।
আর্সেনিক-ঘটিত আরও ওষুধ প্রচলিত হয়েছিল। ডনোভান সলিউশনে ছিল আর্সেনিয়াস আয়োডইড ডি ভ্যালাজিনস সলিউশনে ছিল আর্সেনিয়াস আয়োডইড,ডি ভ্যালাজিনস্ সলিউশনে ছিল আর্সেনিয়াস ক্লোরাইড। এইসবে দাবি করা হত বাত, আর্থাইট্রিস, হাঁপানি, ম্যালেরিয়া, যক্ষ্মা, ডায়াবেটিস, ট্রিপানোসোম সংক্রামণে অব্যর্থ।
ভ্যাম্পায়ার : কল্পকথার উত্স
আল্পসীয় অস্ট্রিয়া অঞ্চলে সাদা আর্সেনিক হাইড্রাক সুলভ ছিল। স্থানীয় মানুষ অনেকেই এটা খেত এবং ক্রমাগত “ডোজ” বা মাত্রা বাড়িয়ে যেত এই বিশ্বাসে যে এতে শরীর ভাল হয়, সুন্দর হয়, উজ্জ্বল গাত্রবর্ণ হয়। সাহিত্যিকরা এর রোমাণ্টিক গুণ বর্ণনা করে গেছেন। আর্সেনিক খাওয়া যুবতীদের প্রেমে পড়ার জন্যে নাকি যুবকরা উন্মত্ত প্রতিযোগিতা করতো। স্বাস্থ্য যৌবন সুরক্ষার জন্য জমিদার ও অভিজাত শ্রেণীর অনেকেই নিয়মিত আর্সেনিক খেতেন। আর্সেনিক খাওয়ার ব্যাপকতা সম্বন্ধে ধারণা করা সম্ভব নয়। কারণ এর সঙ্গে জাদুর আভাস থাকায় চার্চ পচ্ছন্দ করত না। অষ্টাদশ-ঊনিশ শতকে লোকে লুকিয়ে খেত।
স্টাইরিয়ার এই অঞ্চলে কোনও কবরখানা ভরে গেলে প্রায় বারো বছরের মতো কবরখানা বন্ধ করে ব্যক্তিগত কবর বাদ দিয়ে পুরোনো কবর সব খুঁড়ে তা থেকে অস্থি খুলি সব তুলে ‘মড়ি ঘরে’ (কর্নেল হাউস) তুলে রাখা হত। তারপর সমস্ত জমি চাষ করে আবার কবর দেওয়া শুরু হত। এইসব সময় আর্সেনিক ভক্ষী (arsenic eaters) মৃত মানুষদের দেহ প্রায় অবিকৃত অবস্থায় এমন ভাবে পাওয়া যেত যে, বহু বছর পরেও পরিচিত লোকেরা সহজেই তাদের চিনতে পারতো। অনেকের ধারণা, উদঘাটিত এই বাস্তুবতাই ভ্যাম্পায়ার কল্পকথার উত্স। প্রাণরসায়ন বিজ্ঞান থেকে জানা যায়, আর্সেনিক-বাহী দেহ জীবাণু আক্রমণ প্রতিহত করে দেহের পচন নিবারণ করে। অপরাধ অনুসন্ধানের সঙ্গে যুক্ত পেশাদার মানুষরা এসব অনেকদিন ধরেই জানে। এখান থেকে ইঙ্গিত নিয়ে 1897 সালে ইংরেজ গল্পলেখক ব্র্যামস্টোকার তাঁর ড্রাকুলার সুবিখ্যাত ভূতের গল্প লেখেন, যার ভিত্তিতে তৈরি গা-শিউরানো অনেক সিনেমা অনেকেই দেখে থাকবেন। বর্তমান পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যাচ্ছে আর্সেনিক রোগলক্ষণবাহী মানুষজনদের অনেকে রোদে বেরুলে চুলকানি ও জ্বালুনিতে কষ্ট পান, গ্রীষ্ম বা শীত সবকালেই। রক্ত পিশাচ কাউণ্ট ড্রাকুলাও জীবন্ত মানুষের রক্তখাওয়ার জন্য রাতেই বেরুত, দিনের বেলায় কবরে শুয়ে থাকত। সম্প্রতি অবশ্য ড্রাকুলা কল্পকথার আর এক উত্সের কথা শোনা গেছে।
মানব রক্তে লোহিত হিমোগ্লোবিন তৈরির সঙ্গে সঙ্গে পরফাইরিন নামে একগুচ্ছ জৈব রাসায়নিক উত্পন্ন হয়। সাধারণত পরফাইরিন হিমোগ্লোবিনে পরিণত হয়। কিন্তু কোনও কোনও ব্যক্তির শরীরে জিনে খুঁত থাকার ফলে পরফাইরিন থেকে হিমোগ্লোবিন উত্পাদনের প্রাণরাসায়নিক বিক্রিয়াপথ রুদ্ধ থাকে। কোনও কোনও ব্যক্তির দেহে প্রবিষ্ট আর্সেনিকও এই ধরনের ক্রিয়া করতে পারে। ফলে শরীরে, বিশেষ করে ত্বকে, দাঁতের মাড়িতে, অস্থিতে পরফাইরিন জমতে থাকে। এই রাসায়নিক সমূহের বেশ কয়েকটি আলোক সক্রিয়। এই অবস্থায় তারা খুব ক্ষয়কারক (কস্টিক) যার ফলে শরীরের নানাস্থানে, বিশেষ করে ত্বকে, দাঁতের মাড়িতে, অস্থিতে ক্ষয় ধরায়, রক্তক্ষরণ করায় এবং বীভত্স চেহারা সৃষ্টি করে। বিরল জিন ঘটিত এই অসুখ মানুষের মধ্যে প্রাচীন কাল থেকেই দেখা গেছে। তা থেকে ভ্যাম্পায়ার ড্রাকুলার লোককথার উত্পত্তি বলেও কেউ কেউ মনে করেন।
বিশেষ কষ্টকর হল জন্মগত রোগ ক্রাইথ্রোপাইটিক পরফাইরিয়া। এই রোগগ্রস্ত লোকেরা অন্ধকারে ভাল থাকে। রোদে এলেই পরফাইরিন রাসায়নিক সমূহ আলোক সক্রিয় হয়ে নানারকম উপসর্গ ও যন্ত্রণা সৃষ্টি করে। যেমন রক্তাল্পতা, চামড়া কোঁচকানো ইত্যাদি। দাঁতের মাড়ি, কান ও নাকের ডগা ক্ষয়ে গিয়ে রক্তাক্ত বীভত্স চেহারা সৃষ্টি করে। দিনের আলোয় কষ্ট বেশির জন্যে এই ধরনের রোগীরা রাত্রে বেরোত। রসুনে কষ্ট বেশি, তাই রসুনে ভয়. রক্তক্ষয় হেতু রাতে বেরিয়ে অন্যের রক্ত খাওয়ার প্রবণতাও হয়তো কোথাও কোথাও দেখা গেছে। এসবই ড্রাকুলার আচার ব্যবহারের কথা মনে পড়িয়ে দেয়।
Source: Extract from the book titled “Banglay Arsenic: Prokiti O Pratikar” written by Prof. Manindra Narayan Majumder
सम्पर्क
মণীন্দ্র নারায়ণ মজুমদার
প্রাক্তন অধ্যাপক, রসায়ন বিভাগ, ডীন ফ্যাকল্টি অফ সায়েন্স, কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়