Source
Aparajito sahityopatra: Jal Bisesh sankhya, Jan-June, 2008
জনবসতিতে উত্পাদিত নোংরা জলকে কমপক্ষে দুভাবে ভাগ করা হয়। এক হোল মলময় জল বা সিউয়েজ, আরেকটি হোল রান্নাঘর, বাথরুম ও অন্যান্য জায়গায় উত্পাদিত ধোয়ানী জল বা সালেজ (Sullage), ইদানীং কালে একে grey water বলা হয়ে থাকে। এই ধোয়ানী জলকে আলাদাভাবে পরিশোধন করে পুনরায় ধোয়ামোছা, বাগান, গাড়ি ধোয়া জাতীয় গৃহস্থালীর কাজে লাগানো যায়। বাকী মলময় জলকে অবশ্যই শুচি করে ( Treatment) বিভিন্ন কাজে লাগানো যেতে পারে।
জলের ব্যবহার শুধু পানীয় জল হিসেবে নয়, গৃহস্থের কাজে, চাষে, শিল্পে, বিদ্যুত উত্পাদনে এবং এর ব্যবহার নির্ভর করে জনজীবনের জীবনযাত্রার মানের ওপর। নির্ভর করে দেশে প্রদেশে আবহাওয়া, তাপমানের তারতম্যের ওপর। নির্ভর করে সচেতন জীবন বোধের ওপর।সাধারণভাবে সরবরাহকৃত জল বিভিন্নভাবে ব্যবহৃত হওয়ার ফলেই মাপা জলে পরিণত হয়। জনবসতিতে ব্যবহৃত জলের আশি শতাংশ হয়ে থাকে নোংরা জল এই অর্থে, যে জলে তখন থাকে, ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণু, জলে থাকে জৈব ও অজৈব রাসায়নিক পদার্থ। জল হয়ে পড়ে দূষিত, সরাসরি কোন কাজে ব্যবহারের অযোগ্য। এই নোংরা জলের শতকরা 99.9 শতাংশ হয় জল, বাকী 0.1 শতাংশ থাকে কঠিন পদার্থ ( Solids).
নোংরা জলে থাকে রোগবীজবাহী জীবাণু, নানান ধরনের দ্রবীভূত এবং ভাসমান দূষক। ফলতঃ তা দুর্গন্ধ ছড়ায়, পরিবেশ দূষিত করে, রোগজীবাণু ছড়িয়ে মহামারীর সৃষ্টি করে। এই জীবাণুকে আমরা দুটো শ্রেণিতে ভাগ করতে পারি। একদল যারা সংখ্যায় অনেক ভারী, আমাদের ক্ষতি করে না বরং জৈব পদার্থকে ভেঙ্গে জলে জৈবদূষকের মাত্রা কমিয়ে দেয় এবং আরেকদল হোল রোগবাহক জীবাণু যেমন কলেরা, টাইফয়েড, পেটের রোগ ইত্যাদি।
এই দূষিত জলের ভৌত রাসায়নিক ও জীবাণু বিষয়ক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে কিছু ধারণা থাকা দরকার নতুবা নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে অনুধাবন করা অসম্ভব হয়ে পড়বে। একটা জিনিস লক্ষ্যণীয় যে, জনবসতিতে উত্পাদিত নোংরা জলকে কমপক্ষে দুভাবে ভাগ করা হয়। এক হোল মলময় জল বা সিউয়েজ, আরেকটি হোল রান্নাঘর, বাথরুম ও অন্যান্য জায়গায় উত্পাদিত ধোয়ানী জল বা সালেজ (Sullage), ইদানীং কালে একে grey water বলা হয়ে থাকে। এই ধোয়ানী জলকে আলাদাভাবে পরিশোধন করে পুনরায় ধোয়ামোছা, বাগান, গাড়ি ধোয়া জাতীয় গৃহস্থালীর কাজে লাগানো যায়। বাকী মলময় জলকে অবশ্যই শুচি করে ( Treatment) বিভিন্ন কাজে লাগানো যেতে পারে।
বিভিন্ন শিল্প এলাকার উত্পাদনশীল কলকারখানায় উত্পাদিত পণ্য বিভিন্ন প্রকার, সেকারণে তরল বর্জিত পদার্থ বিভিন্ন পদ্ধতিতে শোধন (Treatment) করা হয়ে থাকে। জনবসতিতে উত্পাদিত নোংরা জলের মানের খুব বেশি তারতম্য থাকে না। উত্পাদিত নোংরা জলকে পরিশুদ্ধ করে বিভিন্ন ব্যবহারিক কাজে ব্যবহৃত করার পদ্ধতিগুলোকে আলোচনা করার আগে আমাদের জানতে হবে দূষণ মাত্রায় পরিশুদ্ধতার গুণগতমান। শোধনের মান যতো বাড়াবো, খরচও ততো বাড়বে। আবার মান যতো নামাবো পরিশুদ্ধ জলের গুণগত মান ও বিশুদ্ধতা ততোই কমতে থাকবে। কাজেই বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে স্থির করতে হবে নদী বা হ্রদে ফেলার আগে পরিত্যক্ত ময়লা জল শোধনের মাত্রা কতটা হবে যাতে জলের গুণগতমান ব্যবহারের উপযোগী থাকে অথচ পরিত্যক্ত ময়লা জল শোধনের খরচ খুব বেশি না হয়। এই বিষয়ে গ্রহণযোগ্য ভূমিকা নিতে হলে জানা দরকার-
1. ময়লা জলের পরিমাণ ও দূষকের পরিমাপ।
2. নদী, জলাশয়, হ্রদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহার ও তার জলের গুণগত মান।
3. নদীর ন্যূনতম প্রবাহের পরিমাণ এবং জলে দ্রবীভূত অক্সিজেনের মাত্রা।
4. নদী বা হ্রদের প্রাকৃতিক উপায়ে আত্মাশোধন এবং দূষক ধারণের ক্ষমতা, অর্থাত জল দূষণ নিবারণ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য সেণ্ট্রাল ও প্রাদেশিক দূষণ নিবারণ সরকারী দপ্তরের আইন অনুসরণে জলে বর্জিত পদার্থের ন্যূনতম মাত্রাকে অবশ্যই মেনে নিতে হবে যাতে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা পায়।
পরিশোধনের বিভিন্ন পদ্ধতির ধারণার জন্য জনবসতিতে উত্পাদিত নোংরা জলের ক্ষতিকারক গুণগত মান বিশেষ করে জীব রাসায়নিক অক্সিজেন (Biological Oxygen Demands বা BOD) চাহিদার কঠিন পদার্থের পরিমাণ (Suspended Solids), রাসায়নিক অক্সিজেন চাহিদার পরিমাণ (Chemical Oxygen Demands COD) টোটাল নাইট্রোজেন (Total Nitrogen), কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়া (Total Colifrom) ।
জনবসতিতে উত্পাদিত মলময় জলে বাছাই করা কয়েকটি প্রধান উপাদান:
উত্পাদনমূলক | গুণগতমান, (মিলিগ্রাম প্রতি লিটারে) | ||
| কড়া (Strong) | মাঝামাঝি (Medium) | দুর্বল (Weak) |
ভাসমান কঠিন পদার্থ (SS) | 350 | 220 | 100 |
জীব রাসায়নিক অক্সিজেন চাহিদা (BOD) | 400 | 220 | 110 |
রাসায়নিক অক্সিজেন চাহিদা (COD) | 1000 | 500 | 250 |
নাইট্রোজেনের পরিমাণ | 85 | 40 | 20 |
Source: Aparajito sahityopatra: Jal Bisesh sankhya, Jan-June, 2008
অরুণকান্তি বিশ্বাস (পরিবেশ বিজ্ঞানী, নিরী)